top of page

ওরিয়নের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে আবেদন

May 5, 2025

| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর গণস্বাক্ষর প্রেরণ করা হয়েছে। আবেদনটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও পরিবেশ খাত সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাগণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুলিপি আকারেও প্রেরণ করা হয়েছে।


রোববার (৪ মে) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে জমা দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ক্লিন (উপকূলীয় জীবযাত্রা এবং পরিবেশ কর্মজোট) এর নির্বাহী পরিচালক মেহেদী হাসান।


মাতারবাড়ির স্থানীয় জনগণের মধ্যে ১ হাজারের বেশি সচেতন নাগরিক পরিবেশ ও জীবিকার নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই গণস্বাক্ষরে অংশ নিয়েছেন বলে ক্লিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


আবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, বনাঞ্চল ও অর্থনীতির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও, পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকার কপ-২৬ এবং প্যারিস চুক্তিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নের ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫.৫ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানির প্রয়োজন হবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করবে।


ওরিয়নের মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ফলে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমে আসবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কমপক্ষে ৮৭৫ গ্রাম কার্বন নির্গমন হয়। সে হিসেবে, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি বছর গড়ে ৪১ লক্ষ ৩৮ হাজার টন ও ২৫ বছরে ২৫৮ কোটি ৬২ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হবে। এর ফলে মানবস্বাস্থ্য, ফসল ও পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তার মূল্য বছরে ১১’শ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা বলে মনে করছে ক্লিন।


কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের “থ্রি জিরো” নীতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে জোর দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ। এ প্রেক্ষাপটে, ‘জিরো কার্বন’ নীতির ধারক হিসেবে ড. ইউনূসের দূরদর্শী নেতৃত্বে অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।


বাংলাদেশ বেসরকারি খাতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ওরিয়নের সঙ্গে প্রথম ৩টি চুক্তি করে ২০১২ সালের জুনে। চুক্তি অনুযায়ী একটি মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট, খুলনা ২৮২ ও চট্টগ্রাম ২৮২ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার কথা। খুলনা ও চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ কেন্দ্র (দু’টি) ২০১৬ সালের মার্চে আর মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কিন্তু উৎপাদনে যাওয়া দুরের কথা এক যুগ পেরিয়ে গেলেও কাজেই শুরু করতে পারেনি ওরিয়ন গ্রুপ।


দ্বিতীয় দফায় আরও তিনিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ওরিয়ন গ্রুপকে এলওআই দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে ঢাকা-২৮২ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম ২৮২ ও ঢাকা ৬৩৫ মেওগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দফায় দফায় শুধু সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অর্থায়নের বিষয়ে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় ওরিয়ন। আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তি বাতিল ও নিরাপত্তা জামানত বাজেয়াপ্ত করার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আনুকূল্যে পারে পেয়ে গেছে, এখনও যাচ্ছে। কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পর একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে মাতারবাড়িতে করার অনুমোদন নেয় ওরিয়ন।


অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটি ওইসব চুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ তুলে নিয়েছে। এক সময় রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। সাগর মোহনায় স্থাপিত পায়রা, রামপাল যেখানে নাব্যতা সংকটের জন্য কয়লা সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে মংলায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অলিক কল্পনা ওরিয়নের। মূলত ব্যাংক ঋণ পেতেই তাদের এই কৌশল ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।


সংবাদ লিঙ্ক: ওরিয়নের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে আবেদন

bottom of page