

May 7, 2025
| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
জনগণের কাঁধে নতুন করে যুক্ত হবে ৩০৫৯ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা বিতর্কিত আইনের অধীনে কয়লার বাতিল প্রযুক্তিতে এই বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মানের প্রস্তাব পুরোপুরি অবৈধ বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিডব্লিউজিইডি এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী এই মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার ০৬ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)। সহ-আয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ আইন বিষয়ক সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশাবালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক এই সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিডব্লিউজিইডি এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, ‘বিতর্কিত আইনের অধীন বাবিল প্রযুক্তি দিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই চুক্তি পুরোপুরি অবৈধ। এর ফলে জনগণের কাঁধে নতুন করে ৩,০৫৯ কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিতর্কিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার ওরিয়ন গ্রুপকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কজনা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২, ঢাকা লিমিটেডের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। পিপিএ অনুসারে, চুক্তি পরবর্তী ৪৫ মাস বা ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। কিন্তু ওরিয়ন গ্রুপ নির্ধারিত সময়ে উৎপাদন তো দূরের কথা, নির্মাণ কাজই শুক করতে না পারায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাতারবাড়ি এলাকায় সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়।
তিনি আরো বলেন,পরপর করেকবার সময় পরিবর্তন করে অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাইতে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এই ‘এক্সটেনশন’টা না দিলে- চুক্তিটি আপনা আপনিই বাতিল হয়ে যেতে পারত। বিডব্লিউজিইডির সমর্থনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মাসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, জ্বালানি উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টার নিকট এ দাবিটিই করা হয়। সরকারি তিন ব্যাংক যৌথভাবে ওরিয়ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ১০,৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আহসান এইচ মনসুর এই ঋণের বিরোধিতা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের পক্ষে মত দেন। ২০২৪ সালে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ঋণ নাতিল হলেও, কয়লা প্রকল্পের ঋণ এখনো বহাল রয়েছে।
তিনি বলেন,এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোনো ক্রমেই ২০২৬ সালের মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এর পরে নির্মাণ করলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া স্থান পরিবর্তনের কারণে ভুমি ইজারা ও জ্বালানি পরিবহণ খাতের খরচ পরিবর্তিত হবে, যা ২০১৯ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত টাকার তুলনায় কম হওয়া উচিৎ। শুধুমাত্র এ দুটি কারণেই এ বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) বাতিল করা দরকার। গত ৪ঠা মে ২০২৫, প্রস্তাবিত ওরিয়ন ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে গণসাক্ষর সংবলিত একটি গণআবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বরাবর পেশ করা হয়েছে।
আবেদনটির অনুলিপি বিদ্যুৎ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাবৃন্দ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েয়ছে।একই তারিখে, পরিবেশ, জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এ উদ্যেগে ওরিয়নের কজলাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে দেশের ১৪৪টি নাগরিক সংগঠন অর্থ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এবং জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সিপিজিসিবিএল এর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বরাবর পৃথক চারটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।গত ১লা মার্চ ২০২৫, স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করে মাতারবাড়িতে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। যদিও জানা যায় ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ইআইএ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বে, গত অক্টোবর ২০২৪, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মাননীয় পরিবেশ উপদোইর নিকট বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) ইআইএ বাতিলের আবেদন করে। মানবকূল, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্বার্থসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় গুরিয়নের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের জন্য সরকারের হাতে এখনও যথেষ্ট সময় ও সুযোগ রয়েছে বলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মতামত ব্যক্ত করেন। তাই আরও তথ্যের জন্য ক্লিনের নতুন তথ্যপত্র পড়ুনঃ মাতারবাড়িতে ওরিয়নের পরিবেশ-বিষবংসী ৬৩৫ মেগাওয়াট। করলা-বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করুন
আমাদের দাবিসমূহ:-
ক। পারদসহ অতি-ক্ষতিকর দূষক পদার্থের উল্লেখ না করায় অবিলম্বে ওরিয়ন মাতারবাড়ি কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ বাতিল করুন।
খ। নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায় ওরিয়ন পাওয়ারের সঙ্গে ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত পিপিএ বাতিল করুন।
গ। ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে ওরিয়ন পাওয়ারের ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব বাতিল করুন।
ঘ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা-বিরোধী ইজারা বাতিল করে সরকারি ২ হাজার একর জমিতে অতিদ্রুত সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করুন।
ঙ। কয়লা-বিদ্যুৎসহ আর কোনো জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করার প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি জিরো’ নীতি বাস্তবায়ন করুন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, উপকূলীয় জীবনযাত্রা এবং পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এর প্রধান নির্বাহী *হাসান মেহেদী *। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) কো-অর্ডিনেটর বারিশ হাসান চৌধুরী, একশন এইড এর ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ, সংশপ্তক কক্সবাজার এর ডেপুটি ডিরেক্টর অগ্রদূত দাসগুপ্ত প্রমুখ।
সংবাদ লিঙ্ক: ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন