top of page

নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন না দেয়ার আহ্বান

Nov 19, 2025

| নিজস্ব প্রতিবেদক

বিডব্লিউজিইডির ১২ দফা নাগরিক ইশতেহার প্রকাশ


জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)।


জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ২০২৬ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ন্যায্য রূপান্তরে রাজনৈতিক দলগুলোর স্পষ্ট অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে ১২ দফা নাগরিক ইশতেহার প্রকাশ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সহযোগী সংগঠন হিসেবে অংশ নেয় বেলা, বিলস, ক্লিন, ইটিআই বাংলাদেশ, লিড বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও রিগ্লোবাল।


সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া যাবে না। পুরনো ও অকার্যকর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির আগাম উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে অক্ষম সেগুলোর ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাতিল করতে হবে।


অন্যদিকে নতুন কোনো এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়া যাবে না। পুরনো ও অকার্যকর গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হবে। শিল্প-কারখানার জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎ ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। গ্যাসের লিকেজ ও চোরাই লাইন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গ্যাসের অপচয় রোধ করতে সব খাতে মিটার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।


সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সেবার আওতাভুক্ত। আর গত দেড় দশকে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ২২০-৬৪০ ইউনিটে পৌঁছেছে। তবে জ্বালানি সরবরাহের ঝুঁকি বেড়েছে বহু গুণ। গত ১৬ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। আমদানীকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ ও ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। এ লোকসান ধামাচাপা দেয়ার জন্য জনগণের করের টাকা থেকে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত কিছু অসাধু জ্বালানি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।


নাগরিক সমাজের দাবি, নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো এমন অঙ্গীকার দিক, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমে, শক্তির সার্বভৌমত্ব দৃঢ় হয় এবং পরিবেশ সহনশীল, জনগণ-কেন্দ্রিক জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত হয়। আয়োজকদের মতে অপচয়, অস্বচ্ছ চুক্তি, দুর্বল পরিকল্পনা ও জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে, যা মানুষের ওপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।


সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার পাঠ করেন ক্লিনের নেটওয়ার্ক অ্যাডভাইজার মনোয়ার মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ পরিবার, কিন্তু এ অগ্রগতির আড়ালে রয়েছে আর্থিক অস্থিতি, পরিবেশগত ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি।’ তার ভাষায়, ‌‘২০০৮ সালে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ ছিল ১৪৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১ দশমিক ৪ মিলিয়ন টনে। দূষণের কারণে দেশের বায়ুমান বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।’


বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক গরমিলের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘গত ১৬ বছরে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ নিয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকায়, আর সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।’ তার মতে, শেষ পর্যন্ত এসব ভর্তুকির টাকা কিছু অসাধু জ্বালানি ব্যবসায়ীর পকেটে গেছে, যা বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে।


প্যানেল আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ওয়াসিউর রহমান এবং লিড বাংলাদেশের আইনজীবী ও গবেষণা পরিচালক শিমনউজ্জামান।


১২ দফা নাগরিক ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, পিপিএ ও বাস্তবায়ন চুক্তি উন্মুক্তকরণ, জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি হ্রাস, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করা, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ বন্ধ করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিবহন খাত সবুজায়ন, জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়ন, ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যয়বহুল প্রযুক্তিতে নির্ভরতা কমানো, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ ও কৃষি জমির সুরক্ষা নিশ্চিত করা।


সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো এ ১২ দফা দাবি নিজেদের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং জ্বালানি খাতকে সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও ন্যায্য রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দেবে।


সংবাদ লিঙ্ক: নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন না দেয়ার আহ্বান

bottom of page