

Apr 20, 2025
| নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতি ইউনিট গ্যাস ৭৫ টাকায় আমদানি করে ১২-১৭ টাকায় বিক্রি করা কোনওভাবেই জ্বালানি খাতের টেকসই সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
তিনি বলেন, এর চেয়ে অনেক বেশি টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে যদি আমরা ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের দিকে প্রত্যাবর্তন করি। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের সব গার্মেন্টস সেক্টরের ছাদে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে আমরা জোরালো প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
আজ রবিবার ঢাকায় সামরিক জাদুঘরে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সবুজ জ্বালানি অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে এসব কথা বলেন তিনি।
পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও নেতৃত্ব গড়ার লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনে দেশের ১৫০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৯০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। প্রতিযোগিতাটি ছয়টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ এবং যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। তাদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন, রানার আপসহ শীর্ষ ৫০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, গ্রিন এনার্জি নিয়ে তরুণদের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়ার।
মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট পলিসি দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদিত হবে এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে সহায়ক হবে। এর আওতায় কোনও উদ্যোক্তা নিজের উৎপাদিত বিদ্যুৎ তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রির সুযোগ পাবেন। জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে দেশের যেকোনও প্রান্তে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে উদ্যোক্তারা বাজার খুঁজে নিতে পারবেন, আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জালাল আহমেদ আরও বলেন, নবায়নযোগ্য বলতে আমরা সোলারকে (সৌরবিদ্যুৎ) বুঝে থাকি। কিন্তু আমাদের কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে একটি কোম্পানি। তারা নতুন করে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে। তার অর্থ হচ্ছে খাতটি সম্ভাবনাময়।
সৌরবিদ্যুতের দাম বর্তমানে যথেষ্ট সাশ্রয়ী এবং আমাদের লক্ষ্য পূরণে আমরা সম্পূর্ণভাবে সক্ষম। ভারতে ৪ থেকে ৫ সেন্টসে সৌর বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের সরকার জমি ও সঞ্চালন লাইন করে দিচ্ছে। আমরা জমি দিতে না পরলে ৭ থেকে ৮ সেন্টস হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিইআরসি চেয়ারম্যান।
পাওয়ার সেলের উপ-পরিচালক সেলিম উল্লাহ খান বলেন, গ্রিন এনার্জিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে যে লক্ষ্য ছিল অর্জিত হয়নি। তবে সরকার আর জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক নতুন কোনও প্রকল্প নিচ্ছে না। শুধু সংস্কার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম বলেন, সোলার হোম সিস্টেমে (বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ) আমরা বিশ্বে রেকর্ড করেছিলাম। চাহিদা এখন আরও বেড়ে গেছে। সোলার প্যানেল সবচেয়ে সাশ্রয়ী অবস্থায় চলে এসেছে। পনের বছর আগে যার দাম ছিল ১ ডলার এখন সেটি কমে ৯/১০ সেন্টসে চলে এসেছে।
‘ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে শিল্পে বিদ্যুৎ চাহিদার একটি বড় অংশ মেটানো সম্ভব। আমাদের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে শুধু সৌর নয়, বায়ু বিদ্যুতের দিকেও গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে। আমাদের বিনিয়োগের সমস্যা নেই,’ বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি ভবিষ্যৎ কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রশ্ন নয়, এটি ন্যায্যতা, পরিবেশ এবং প্রজন্মান্তরের নিরাপত্তার প্রশ্ন। এখনই সময়, বিদেশনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে স্থানীয় ও টেকসই উৎসকে কেন্দ্র করে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়ার। জ্বালানি সেক্টরে তরুণদের স্বতঃস্ফুর্ত সম্পৃক্ততা এখন অতীব আবশ্যক।
প্রতিযোগিতাটি ছয়টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ এবং যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। এই আয়োজনে উপস্থিত সকলেই তাদের সমর্থন ও গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা তরুণদের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে নেতৃত্ব গড়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন আরাফাত জুলফিকার বলেন, জিও অলিম্পিয়াড এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যা সব সেক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একত্র করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির এই টেকসই আন্দোলন অব্যাহত থাকুক।
সংবাদ লিঙ্কঃ ২০২৬ সালের মধ্যে সব গার্মেন্টসের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের প্রচেষ্টা