

Nov 18, 2025
| নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের অস্বচ্ছতা, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা, আর্থিক গড়মিল ও পরিবেশগত ঝুঁকি দূর করে নবায়নযোগ্য, স্বচ্ছ এবং জনগণ-কেন্দ্রিক শক্তি রূপান্তর নিশ্চিত করতে ১২ দফা নাগরিক ইশতেহার প্রকাশ করেছে দেশের নাগরিক সমাজ।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)’ এই ইশতেহার প্রকাশ করে। এতে সহযোগী সংগঠন হিসেবে অংশ নেয় বেলা, বিলস, ক্লিন, ইটিআই বাংলাদেশ, লিড বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও রিগ্লোবাল।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ন্যায্য রূপান্তরে রাজনৈতিক দলগুলোর স্পষ্ট অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে এই ইশতেহার প্রকাশ করেছে তারা৷ নাগরিক সমাজের দাবি, নির্বাচনি ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এমন অঙ্গীকার দেওয়া হোক; যাতে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমে, শক্তির সার্বভৌমত্ব দৃঢ় হয় এবং পরিবেশসহনশীল, জনগণ-কেন্দ্রিক জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত হয়। আয়োজকদের মতে, অপচয়, অস্বচ্ছ চুক্তি, দুর্বল পরিকল্পনা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে, যা মানুষের ওপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার পাঠ করেন ক্লিন-এর নেটওয়ার্ক এডভাইজার মনোয়ার মোস্তফা। তিনি বলেন, “দেশে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ পরিবার, কিন্তু এই অগ্রগতির আড়ালে রয়েছে আর্থিক অস্থিতি, পরিবেশগত ক্ষতি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি। তার ভাষ্য, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ ছিল ১৪৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন, যা এখন বেড়ে হয়েছে ২৮১ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন। দূষণের কারণে দেশের বায়ুমান বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।
বিডাব্লিউজিইডি-এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, “গত ১৬ বছরে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ নিয়েছে ১ দশমিক ৭২ ট্রিলিয়ন টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন টাকা, আর সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ২ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন টাকা।” সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ওয়াসিউর রহমান এবং লিড বাংলাদেশের আইনজীবী ও গবেষণা পরিচালক শিমনউজ্জামান। তারা জানান, দেশের জন্য ন্যায্য, স্বচ্ছ ও সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক শক্তি রূপান্তর এখন সময়ের দাবি।
১২ দফা নাগরিক ইশতেহারের মধ্যে আছে- জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, পিপিএ–বাস্তবায়ন চুক্তি প্রকাশ, জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, নতুন কয়লা–তেল–গ্যাস প্রকল্প বন্ধ ও অকার্যকর কেন্দ্র নবায়নযোগ্য স্থাপনায় প্রতিস্থাপন, নতুন এলএনজি টার্মিনাল বাতিল ও বাধ্যতামূলক মিটারিং, ২০৩০–২০৫০ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, বৈদ্যুতিক যানবাহনে শুল্ক–কর হ্রাস, জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়ন ও ‘সূর্যবাড়ি’তে ভর্তুকি–সহায়তা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য খাতে ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যয়বহুল অপ্রমাণিত প্রযুক্তি বর্জন, অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্বালানি নীতি নিশ্চিতকরণ এবং কৃষিজমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে সবুজ প্রকল্পে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ লিঙ্ক: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ১২ দফা নাগরিক ইশতেহার