top of page

‘বিইআরসি ও স্রেডাকে বামন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে’

Sep 12, 2024

| আবু সাঈদ নিশান | সময় নিউজ

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বামন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।


বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কার, নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)।


খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বামন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। আশা করছি এই জায়গা থেকে এই সরকার সরে আসবে। বিশেষ করে বিইআরসি, স্রেডার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধীরে ধীরে খর্ব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি খর্ব করে বিপিডিবি ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া হয়েছে। এইগুলোর আগের শক্তি বা ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’  

   

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একটা চক্র গড়ে উঠেছিল জানিয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্ট, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আমলা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোকজনকে নিয়ে চক্রটি গড়ে উঠেছিল। ফলে জাতীয় চাহিদা সম্পন্ন নীতি কখনো প্রণয়ন করা হয়নি। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কোন ব্যক্তিস্বার্থে বা কোন গোষ্ঠীস্বার্থে। আমরা দেখতে চাই এই চক্র ভেঙে গেছে।’  

   

তিনি বলেন, নীতি ও আইন নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিরাপত্তা আইনসহ অনেক আইন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ টার্গেট করা হয়েছে। আগামীতে আমরা এ ধরনের আইন দেখতে চাই না। আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর প্রণীত নীতির কাছে যেন জিম্মি না হয়ে যাই।  

   

জ্বালানি খাতের যেকোনো ধরনের চুক্তি যেন প্রতিযোগিতামূলকভাবে হয় দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, চুক্তিগুলো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এক্টে দ্রুততর সময়ের মধ্যে যেন হয়। সমস্ত বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা, জ্বালানি নীতি প্রণয়নকালে অংশীজনদের সঙ্গে রাখার দাবিও জানান তিনি। 

   

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রচলিত ধারণা আছে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র না হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি করা যায় না। এই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর মাধ্যমেও যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ করা যায়, সেগুলোকে প্রাধিকার দিতে হবে।  

   

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোটের (বিডাব্লিউজিইডি) সদস্যসচিব হাসান মেহেদি।  

   

হাসান মেহেদি বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনের মত কালাকানুন স্থগিত করা হয়েছে। জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ক্ষমতা পুনরায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে দেয়াসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।  

   

তিনি বলেন, বিগত সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও দুর্বৃত্তায়ন বিদ্যুৎ-জ্বালানী খাতকে পতনের দ্বারে নিয়ে গেছে। যে খাত রাষ্ট্রের শক্তিশালী সম্পদ হওয়ার কথা ছিল, তা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে।  

   

মূল প্রবন্ধে জাতীয় জ্বালানি কমিশন গঠন, এ খাতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা, জীবাশ্ম জ্বালানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা, কয়লা বন্ধের নীতি নেয়া, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অচল হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিপিএ বাতিল করাসহ ১৬ দফা দাবি জানান তারা।  

   

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ (সংশোধনীসহ) অবিলম্বে বাতিল। স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠন করা। প্রাথমিক পরিবেশগত নিরীক্ষা (আইইই) ও পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন (ইআইএ) উন্মুক্ত এবং বাধ্যতামূলক করা।  

   

জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ‌‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে’ নীতির আওতায় আনা। চুক্তি সম্পাদিত তবে নির্মাণাধীন নয়, এমন সব জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করতে হবে।

   

অনুমোদিত এবং প্রস্তাবিত নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ‘শূন্য কার্বন’ নিশ্চিত করার জন্য নতুন মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করতে হবে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)-কে স্বতন্ত্র ডিভিশনের মর্যাদা দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি কর ও ভ্যাট মওকুফ করা। সহজ শর্তে ও স্বল্প/বিনাসুদে মোট নির্মাণ-ব্যয়ের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণ দিতে হবে।  

   

হাইব্রিড যানবাহনের আমদানি শুল্ককর ও নিবন্ধন ফি কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কম এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের (EV) ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কম করতে হবে। সৌরভিত্তিক চার্জিং স্টেশন অনুমোদন। সৌর প্যানেল নির্মাণের জন্য ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। তরুণ উদ্যোক্তা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার দাব্রি জানানো হয়।  

   

এসময় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান, ইথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের ম্যানেজার মুনীর উদ্দিন শামীম প্রমুখ।


সংবাদ লিঙ্কঃ বিইআরসি ও স্রেডাকে বামন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে

bottom of page