

Apr 20, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি আন্দোলন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার তরুণ শিক্ষার্থীরা। রোববার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর সামরিক জাদুঘর মিলনায়তে ‘সবুজ জ্বালানি অলিম্পিয়াড-২০২৫’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। এ সময় অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন আরাফাত জুলফিকার বলেন, এই অলিম্পিয়াড এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যা সব সেক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির এই টেকসই আন্দোলন আমরা অব্যাহত রাখবো।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ অলিম্পিয়াডে দেশের ১৫০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। প্রতিযোগিতাটি ছয়টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ এবং যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। তাদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন, রানার আপসহ শীর্ষ ৫০জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
সমাপরী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, নবায়নযোগ্য বলতে আমরা সোলারকে বুঝে থাকি। কিন্তু আমাদের কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে একটি কোম্পানি। তারা নতুন করে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে। তার অর্থ হচ্ছে খাতটি সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, আমরা যখন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেই তখন বৈষম্যের প্রশ্ন এসেছিল, আমি জবাব দেইনি। কারণ বিকল্প যদি সহজলভ্য হয় তাহলে লোকজন সেদিকে যাবে। ভারতে ৪ থেকে ৫ সেন্টসে সৌর বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের সরকার জমি ও সঞ্চালন লাইন করে দিচ্ছে। আমরা জমি দিতে না পরলে ৭ থেকে ৮ সেন্টস হওয়া উচিত। ২০২৬ সালের মধ্যে সকল গার্মেন্টে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসবে। এটা করতে পারলে বড় অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, ৭৫ টাকায় গ্যাস আমদানি করে ১২-১৭ টাকায় বিক্রি করা কোনোভাবেই টেকসই সমাধান নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে যদি আমরা সৌরবিদ্যুতের দিকে যেতে পারি। গ্রিন এনার্জি নিয়ে তরুণদের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়ার।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট পলিসি দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদিত হবে। তখন চট্টগ্রামের কেউ চাইলে দিনাজপুরের গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট পলিসি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে বড় ভূমিকা রাখবে। এর আওতায় উদ্যোক্তা নিজের উৎপাদিত বিদ্যুৎ তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রির সুযোগ পাবেন। জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে দেশের যে কোন প্রান্তে বিক্রি করতে পারবেন। এতে উদ্যোক্তারা বাজার খুঁজে নিতে পারবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার সেলের উপ-পরিচালক সেলিম উল্লাহ খান বলেন, গ্রিন এনার্জিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে টাগের্ড ছিল অর্জন করতে পারিনি। তবে সরকার আর ফসিল ফুয়েলের নতুন কোন প্রকল্প নিচ্ছেনা। শুধু সংস্কার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম বলেন, সোলার হোমস সিস্টেমে আমরা বিশ্বে রেকর্ড করেছিলাম। চাহিদা এখন আরো বেড়েছে। সোলার প্যানেল সবচেয়ে সাশ্রয়ী অবস্থায় চলে এসেছে। পনের বছর আগে যার দাম ছিল এক ডলার এখন সেটি কমে ৯/১০ সেনটসে চলে এসেছে। আমাদের বিনিয়োগের সমস্যা নেই।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি ভবিষ্যৎ কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রশ্ন নয়, এটি ন্যায্যতা, পরিবেশ এবং প্রজন্মান্তরের নিরাপত্তার প্রশ্ন। এখনই সময়, বিদেশনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে স্থানীয় ও টেকসই উৎসকে কেন্দ্র করে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়ার। জ্বালানি সেক্টরে তরুণদের স্বতঃস্ফুর্ত সম্পৃক্ততা খুবই জরুরি।
News Link: ‘সবুজ জ্বালানি অলিম্পিয়াড’-এ শিক্ষার্থীদের টেকসই অঙ্গীকার