top of page

কপ-৩০: জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে রোডম্যাপ চায় পরিবেশবাদী সংগঠন

Nov 6, 2025

| জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

আসন্ন কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধে একটি স্পষ্ট ও কার্যকর রোডম্যাপ তৈরির জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি)। একইসঙ্গে কার্বন ক্যাপচার ও পারমাণবিক শক্তির মতো প্রকল্পকে ‘ভুয়া সমাধান’ আখ্যা দিয়ে তা পরিহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।


বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিডব্লিউজিইডি সতর্ক করে বলেছে, অ্যামোনিয়া কো ফায়ারিং, কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (সিসিএস), তরল হাইড্রোজেন, পারমাণবিক শক্তি এবং বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের মতো উদ্যোগগুলো ব্যয়বহুল, অপ্রমাণিত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে বড় বাধা।


তাদের মতে, এসব প্রযুক্তি বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে কার্বন নির্ভরতার ফাঁদে ফেলবে। ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিতব্য কপ-৩০ সম্মেলনকে সামনে রেখে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেছে বিডব্লিউজিইডি।


দাবিগুলো হলো:

অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন: নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফাইড গোল অবিলম্বে কার্যকর করে বছরে কমপক্ষে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দিতে হবে। এই অর্থ কোনো বহুপাক্ষিক সংস্থার মাধ্যমে না এসে সরাসরি জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছাতে হবে।

প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা বৃদ্ধি: উন্নত সৌর, বায়ু, ব্যাটারি সংরক্ষণ ও স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তিকে ‘বৈশ্বিক জনসম্পদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এসব প্রযুক্তির প্রসারে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির সব বাধা দূর করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে দেশীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

ন্যায়বিচার ও ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ: উন্নত দেশ ও বহুপাক্ষিক ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে এলএনজি প্রকল্পে অর্থায়ন, ভর্তুকি ও বীমা প্রদান বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি একটি ‘ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর তহবিল’ গঠন করতে হবে, যা ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষা দেবে। ক্ষয়ক্ষতি তহবিলটি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে, কোনো স্বেচ্ছাসেবী অনুদানের ওপর নয়।


বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সৌর শক্তি থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং বায়ু শক্তি থেকে প্রায় ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সংগঠনটি জানায়, শুধুমাত্র ছাদে ও ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যবহার করেই ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।


বর্তমানে সৌরশক্তির উৎপাদন খরচ আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় তিনগুণ সাশ্রয়ী উল্লেখ করে বিডব্লিউজিইডি জানায়, ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি অর্জনে ৩৫ থেকে ৪৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, যা দেশের বার্ষিক জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি ব্যয়ের চেয়েও কম।


এ বিষয়ে বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, “কপ-৩০ এ আমরা ঋণের খেলা ও ভুয়া সমাধানের মুখোশ উন্মোচন করে একটি সত্যিকার অর্থে ন্যায়সঙ্গত ও পূর্ণ অর্থায়িত রূপান্তর চাই, যা জীবাশ্ম জ্বালানির যুগের অবসান ঘটাবে।” তিনি আরও বলেন, “বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে এখন ফাঁকা প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।”


সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়িমসির কারণে বাংলাদেশকে অসহনীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। কপ-৩০ এ এই উদাসীনতার অবসান ঘটাতে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।” বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দাবি আদায়ে বিডব্লিউজিইডি এলডিসি গ্রুপ, জি ৭৭ ও চায়না এবং নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।


সংবাদ লিঙ্ক: কপ-৩০: জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে রোডম্যাপ চায় পরিবেশবাদী সংগঠন

bottom of page